'অওরতেঁ' - রমাশংকর যাদব / বিদ্রোহী
- People's News Indie
- Jul 20, 2020
- 2 min read
বিদ্রোহী রমাশংকর যাদবের কবিতা অওরতেঁ।
ভাষান্তর : দীপঙ্কর দত্ত

নারী
কিছু নারী স্বেচ্ছায় কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো,
একথা পুলিশ রেকর্ডে লেখা আছে।
আর কিছু নারী স্বেচ্ছায় চিতায় উঠে জ্বলে পুড়ে মরেছে,
একথার উল্লেখ ধর্মের বইগুলিতে আছে।
আমি কবি, আমি কর্তা
এতো তাড়া কিসের,
আমি একদিন পুলিশ আর পুরোহিত, দুজনকেই একই সঙ্গে
নারীর আদালতে তলব করবো,
আর মাঝখানের সমস্ত আদালতগুলোকে অমান্য করে দেবো।
আমি সেই হলফনামাগুলিকেও খারিজ করে দেবো,
যে শ্রীমানরা মহিলা আর বাচ্চাদের বিরুদ্ধে পেশ করেছিলো।
আমি সেই উপাধিগুলোকে বাতিল করে দেবো, যার ভিত্তিতে নিলামের দর ওঠে।
আমি সেই ইচ্ছাপত্রগুলোকে নাকচ করে দেবো,
যা নির্বল মানুষরা বাহুবলীদের নামে হস্তান্তর করেছে।
আমি সেই নারীদের
যারা স্বেচ্ছায় কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে কিম্বা চিতায় জ্বলে মরেছে,
ফের জীবিত করবো, আর তাদের বয়ান আরেকবার লিপিবদ্ধ করবো।
কোথাও কোনও কিছু বাদ পড়ল না তো!
কোথাও কিছু বাকী থেকে গেলো না তো!
কোথাও কোনও ভুল হয় নি তো!
কেননা আমি সেই নারীর কথা জানি
যে নিজের সাত বিঘতের শরীর এক বিঘতের আঙিনায়
সারা জীবন গুটিয়ে রাখলো আর বাইরের পৃথিবীটায় উঁকি পর্যন্ত দিলো না।
আর যখন বাইরে বেরোলো তো সে নয়, বেরোলো তার লাশ।
যা প্রকাশ্যে মা মেদিনীর মতো ছড়িয়ে পড়ল।
নারীর মৃত শরীর মা ধরিত্রীর মতো, বন্ধুগণ !
খোলা আকাশের নীচে যা থানাগুলি থেকে আদালত পর্যন্ত প্রসারিত থাকে।
আমি দেখছি অত্যাচারের সমস্ত সাবুদ মুছে ফেলা হচ্ছে।
চন্দন চর্চিত ললাট উঁচু করে পুরোহিত, আর মেডেল আঁটা বুক চেতানো সৈনিক,
মহারাজের জয়ধ্বনি করছে।
এমন মহারাজ যে আজ মৃত
আর মহারানীরা সহমরণে সতী হওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে
আর যখন মহারানীরা খোদ থাকছে না, তো চাকরানীরা কি করবে ?
তাই তারাও প্রস্তুত হচ্ছে।
আমার তো মহারানীদের থেকে চাকরানীদের চিন্তা বেশী হয়,
যাদের পুরুষ বেচারারা জীবিত এবং বিলাপরত।
কত খারাপ লাগে যখন এক নারী নিজের ক্রন্দনরত পুরুষকে রেখে মরে,
যখন ক্রন্দনরতা নারীদের পেটানো পুরুষের মোটেই খারাপ লাগে না।
নারীরা কাঁদতে থাকে, আর পুরুষরা পেটাতে থাকে।
নারীরা আরও জোরে কাঁদে, পুরুষরা আরো জোরে মারে।
নারীরা চিৎকার করে কাঁদে, পুরুষরা তখন এত জোরে মারে যে নারীরা মরেই যায়।
ইতিহাসে সেই প্রথম নারীটি কে, যাকে জ্বালিয়ে মারা হয় ?
আমি জানি না,
কিন্তু সে যেই হোক, আমার কোনও জন্মের মা-ই হবে হয়ত।
কিন্তু এখন আমার চিন্তা এটাই যে, সেই সর্বশেষ নারীটি কে
যাকে সব শেষে জ্বালিয়ে মারা হবে ?
আমি জানি না,
যেই হোক, আমার নিজের কোনো মেয়েই হবে,
আর আমি তা হতে দেবো না।

বিদ্রোহী রমাশংকর যাদব, তার কবিতা এবং কবিতার রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হলে তথ্যচিত্রটি দেখুন।
ম্যে তুমহারা কবি হুঁ।
https://youtu.be/sGRLi11GneU
Comentarios