top of page

ইআইএ ড্রাফট ২০২০ নিয়ে একটি আলোচনা

  • Writer: People's News Indie
    People's News Indie
  • Jul 17, 2020
  • 5 min read

আমরা জানি EIA ড্রাফ্ট ২০২০ এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই 'EIA' কি? কি সেই নতুন ড্রাফট এবং এই লকডাউন পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে আমাদের কি করনীয় হতে পারে তা নিয়েই এই সহজ ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পুরো অংশ পড়ার এবং মত বিনিময়ের অনুরোধ রইলো। লিখেছেন: শৌভিক মুখার্জী

১৯৮৬সালে পরিবেশ রক্ষা আইনে EIAর কথা বলা আছে। এর কাজ হল কোনো প্রকল্প (রিয়ালস্টেট, কোলমাইন, কেমিকেল প্ল্যান্ট, ছোট বড় ইন্ডাস্ট্রি) তা পরিবেশের কী পরিমাণ প্রভাব ফেলবে তার তথ্যানুসন্ধান। এই EIA/ এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট এর মাধ্যমে যদি দেখা যায়, প্রকল্পের নেগেটিভ প্রভাব অনেক বেশি তখন সেই প্রকল্পটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়না। বর্তমানে ২০০৬ এর EIA নিয়ম অনুযায়ী নতুন প্রকল্প বা পুরনো প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগে তাকে EC বা এনভায়রন্মেন্টাল ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। তপশীল ১ অনুযায়ী প্রকল্পগুলি দু ভাগে বিভক্ত - ক্যাটেগরি এ (পরিবেশের ওপর প্রভাব বেশি, ছাড়পত্র নিতে হয় সরাসরি MoEFCC বা কেন্দ্র সরকার থেকে) ও ক্যাটেগরি বি (পরিবেশের ওপর প্রভাব তুলনায় কম, ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় স্টেট এক্সপার্ট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেস্মেন্ট অথোরিটি বা রাজ্য সরকারের থেকে) উভয় ক্ষেত্রে এই ছাড়পত্র পাওয়ার চারটি ধাপ স্ক্রিনিং, স্কোপিং, পাবলিক কন্সাল্টেশন এবং অ্যাপ্রাইজাল, যার প্রতিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের দেশে তো সব নিয়ম মেনে হয়না, যা হয় সবই কর্পোরেট গোষ্ঠীর স্বার্থে, ফলে পাবলিক কন্সাল্টেশন বা পাবলিক হিয়ারিং এর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে বারবার ওভারলুক করা হয়। যার একাধিক উদাহরণ আমাদের জানা। যার ফলে নিজেদের জল জঙ্গল জমি থেকে উৎখাত হতে হয় আগলে রাখা জনগোষ্ঠীদের, বিশাখাপতনমে EC/ এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া কেমিক্যাল প্ল্যান্টে গ্যাস লিকের মত ঘটনা ঘটে, পাবলিক হিয়ারিং না হওয়ায় আসামে অয়েল ওয়েলে আগুন লাগে। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষা আইনে যতটুকু পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র, মানুষের জীবনজিবিকা রক্ষার ক্ষমতা আছে তার হাজার লিমিটেশন থাকলেও তাকে আরো মজবুত এবং সঠিক ইম্প্লিমেন্টেশনের বদলে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার একে আরও দুর্বল করার জন্য নিয়ে এসেছে EIA ড্রাফট ২০২০। ৮০ পাতার এই ড্রাফট থেকে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, যা খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ধ্রুব রাঠী। ১) এই নতুন EIA ড্রাফ্টে আছে Post - Facto clearance. অর্থাৎ পরিবেশগত ছাড়পত্র/ EC ছাড়াই কোনো প্রকল্পের কাজ চলতে পারে। ধরুন কোনো কোল মাইন হবে হাজার হাজার একর জঙ্গল কেটে। প্রকল্পকারী সেইমত কাজ নির্দ্বিধায় চালাতে পারে EC ছাড়াই। ড্রাফ্ট অনুযায়ী এই ক্লিয়ারেন্স কাজ শুরুর পরেও পাওয়া যেতে পারে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট এপ্রিলে একটি জাজমেন্টে Post - Facto clearance কে ভুল এবং এমন আইন করা উচিৎ নয় বলে জানিয়েছে। ২) পাবলিক হিয়ারিং এর সময় কমিয়ে আনা। এর আগে এর সময় ছিল ৩০ দিন। অর্থাৎ কোনো একটি বড় প্রকল্প ধরা যাক মোটামুটি ৫/১০ বছর লাগার কথা যেটি সম্পূর্ণ হতে সেটির নেগেটিভ দিক, তার ক্ষয়ক্ষতি, জনমানুষের মতামত, অভিযোগ সবটাই মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে সরকারি আধিকারিকদের কাছে। যেটা খুবই কম সময়। এখন নতুন ড্রাফ্টে সেটা আরো কমিয়ে ২০ দিন করা হয়েছে। ড্রাফ্টের নতুন খসড়ার ৪৭ নং পাতায় ৩.১ এর শেষ লাইনে বলা আছে: A minimum notice period of 20 days shall be provided to the public for furnishing their responses. ৩) নতুন ড্রাফট অনুযায়ী, যদি কোনো প্রকল্প পরিবেশ আইনকে উলঙ্ঘন করে তবে সাধারণ মানুষের অধিকার নেই সেটা চিহ্নিত করার বা সেটি নিয়ে কোনো অভিযোগ জানানোর। যদি উলঙ্ঘন হয় তবে শুধুমাত্র উলঙ্ঘনকারী (প্রকল্পকারী) বা সরকার বলতে পারে সেটা। হ্যাঁ, ২৯ নং পাতার ২২নং পয়েন্টে বলা হচ্ছে: The cognizance of the violation shall be made on the - Suomoto application of the project proponent or it can be done by the government authority.... Suo moto application মানে প্রকল্পকারী শুধু নিজেই বলতে পারে তার পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের কথা। হ্যাঁ, ভাবুন আম্বানি, আদানিরা নিজেরাই ঘোষনা করছে তিনি পরিবেশ আইন উলঙ্ঘন করেছেন। ব্যাপারটা এরকমই কিউট। ৪) পেজ ৯.৭ এ বলা হচ্ছে all projects concerning national defence and security or involving other strategic considerations, as determined by the central government.... further no information relating to such projects shall be placed in public domain. অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার যদি মনে করে কোনো প্রজেক্টকে স্ট্র্যাটেজিক প্রজেক্ট তাহলে তার তথ্য ওপেন করা হবেনা, পাবলিক হিয়ারিং হবেনা। সরকার যেকোন প্রজেক্ট কেই স্ট্র্যাটেজিক প্রজেক্ট বলতে পারে, তার সাথে ন্যাশনাল সিকিউরিটির কোনো সম্পর্ক না থাকলেও, আমি আপনি সেক্ষেত্রে কিচ্ছুটি বলতে পারবোনা। ৫) পাবলিক কনসালটেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ EIA এর। ড্রাফটে সেখানেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। পেজ ১৯ এর পয়েন্ট ২ এ বলা হচ্ছে public consultation is exempted for the following: এখানে কোন কোন প্রোজেক্টে পাবলিক কনসালটেশন হবেনা তার লিস্ট আছে। এফ নম্বর পয়েন্টে বলছে all linear projects under item 31 and 38, in border areas. ৩নং পেজে পয়েন্ট নং ৬ এ বর্ডার এরিয়ার ডেফিনেশনে বলা আছে border area means area falling within 100 km aerial distance from the line of actual control with bordering countries of India. মোদ্দা কথা পুরো নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া টার্গেট, যেখানে পাবলিক কোনসালটেশন হবেনা। যতটুকু জঙ্গল বেঁচে ছিল নজর এখন সেইদিকে। যারা ড্রাফটি পড়তে চান তাদের সুবিধার জন্য এই লিঙ্কটি থাকলো। ড্রাফটের ফ্লস গুলো এখানে ইয়োলো মার্ক করে হাইলাইট করা আছে। https://we.tl/t-lwHFgZ2mbh?src=dnl লেনিনের লেখা থেকে পড়েছিলাম লাতিন ভাষায় একটি বহু ব্যবহৃত উদ্ধৃতি আছে: 'কুই প্রডেস্ট' (cui prodest) যার অর্থ 'কার লাভ হচ্ছে?' কোনো প্রস্তাব বা ব্যবস্থা বা উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে ঠিক কারা লাভবান হচ্ছে। লেনিন সেই ১৯১৩তে তারই অনুসন্ধানের কথা বলেছিলেন। আশাকরি আমরা কিছুটা হলেও বুঝেছি এই ড্রাফটের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি, যার জন্য এই লকডাউনের মধ্যে এটাকে বিল বানানোর এত তড়িঘড়ি চেষ্টা। পাবলিক ট্রাস্ট ডকট্রিন, ভারত সরকারের ২০০৭ পরিবেশ নীতিতে যার কথা বলা আছে। অর্থাৎ দেশে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক রাষ্ট্র নয়, নির্দিষ্ট সম্পদে থাকা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী। এই নতুন EIA এর খসড়া এই পাবলিক ট্রাস্ট ডকট্রিন এর যে কনসেপ্ট তাকে উলঙ্ঘন করছে। আম্বানি আদানি জিন্দেল এর মত কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলিকে যথেচ্ছভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে জনজাতির অস্তিত্বকে আরো বিপন্ন করে তোলার অস্ত্র এই নতুন EIA, একে খারিজ করার দাবি অবিলম্বে ওঠা উচিৎ। সরকারের উপর যেকোন ভাবে চাপ না তৈরি করা গেলে তা হবেনা। রাস্তায় নামার কোনো বিকল্প নেই। তাই এই জনবিরোধী খসড়াকে অবিলম্বে বাতিলের দাবিতে সমস্ত রাজনৈতিক কর্মী (যারা এই পরিবেশের প্রশ্নকে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় সরাসরি রাখেন) পরিবেশ কর্মী সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক উদ্যোগে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। সেটা কিভাবে কি ফর্মে এই লকডাউনে সম্ভব তা আলোচনা সাপেক্ষ। সাথে আরো কয়েকটি জিনিস এই মুহূর্তে করা যেতে পারে। হাতে সময় ১১ই আগস্ট পর্যন্ত। ১. যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে করা এই পিটিশনটিতে সাইন। এটি চেঞ্জ.ওআরজি তে প্রকাশ জাভেদকার এবং সি.কে মিশ্রকে এড্রেস করে করা আছে। সাইন করুন। https://www.change.org/p/c-k-mishra-secretary-ministry-of-environment-forests-and-climate-change-withdraw-the-draft-eia-notification-2020?recruiter=667314203&utm_source=share_petition&utm_medium=copylink&utm_campaign=tap_basic_share&utm_term=psf_combo_share_message ২. ইন্ডিভিজুয়াল মেইল। এই EIA ড্রাফট নিয়ে আপনার অবজেকশন গুলি পয়েন্ট করে নিজের মত লিখে পাঠান eia2020-moefcc@gov.in এই আইডিতে। মনে রাখবেন ১১ই আগস্ট এই অবজেকশন জমা পড়ার শেষ তারিখ। বিভিন্ন পরিবেশ কর্মীরা মনে করছেন যত বেশি মেইল করা যাবে তত ভালো। অবজেকশন গুলি জমা পড়া প্রয়োজন। আপনি যদি নিজে না লেখেন উপরের পিটিশনের ম্যাটার কপি করে পাঠাতে পারেন। সাথে ড্রাফটের হাইলাইট করা লিংকটি এটাচ করে দিতে পারেন। লিখতে চাইলে লেখার সাজেশন নিতে পারেন এখান থেকে। https://fffindia.github.io/withdrawEIA2020/ ৩) চেষ্টা করুন EIA এর এই নতুন ড্রাফট সংক্রান্ত বিষয় ও পদ্ধতি গুলি আরো বেশি করে স্প্রেড করতে। এই নিয়ে আলোচনা, উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন ড্রাফটি রিজেক্টের দাবি সরাসরি তোলা। হাতে সময় খুবই কম। এই লকডাউন পরিস্থিতিটিকেই সরকার বেছে নিয়েছে সবকিছু বেচে দেবার। প্রতিরোধ করুন। সময় সত্যিই কম।

Commentaires


Subscribe Form

©2020 by People's News Indie. Proudly created with Wix.com

bottom of page