top of page

বিপ্লবী শিল্পী হেলিন বোলেকের লড়াই মুক্তিকামী প্রতিটি মানুষের পক্ষে 

  • Writer: People's News Indie
    People's News Indie
  • Apr 9, 2020
  • 3 min read

"হেলিন বোলেকের নাম হয়তো এখন অনেকেই শুনেছেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সী এক তরুণী শিল্পী। ২৮৮ দিন অনশন করে গত ৩রা এপ্রিল তুরস্কের ইস্তানবুলে শহীদ হলেন। একই সাথে তাঁর লড়াইয়ের সাথী ইব্রাহিম গোকচেক এবং মোস্তফা কোচাক যথাক্রমে ২৯৪ এবং ২৮২ দিন অনশন করছেন। হয়তো আর কয়েক দিনের মধ্যে আমরা তাঁদেরও শহীদ হতে দেখব। কিন্তু কিসের জন্য তাঁদের এই লড়াই? হেলিন বোলেকের মৃত্যুর খবরটা শোনার পর যতটুকু অনুসন্ধান করতে পেরেছি তার কিছু অংশ এখানে লিখলাম।"


লেখিকা: জুবি সাহা

মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ তুরস্ক। যার বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন এরদোগান, AKP (Justice and Development Party) পার্টির নেতা, যিনি একাধারে নারীবিদ্বেষী, সমকামিতা বিরোধী, কমিউনিস্ট-অ্যানার্কিস্ট এবং স্বাধীনতা-গণতন্ত্রপ্রিয় যে কোনো শক্তির বিরোধী। এখানেই স্বাধীনতা-গণতন্ত্র-মৈত্রীর জন্য কুর্দরা (Kurd: তুরস্কের একটি জাতি) যেভাবে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তা আমাদের অনেকেরই জানা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কুর্দদের এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানত মেয়েরা। এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যে ISIS এর নামে সারা পৃথিবী কাঁপে, যাদের বিনাশ করার জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়করা প্রতিরক্ষার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেন, তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে মিলিট্যান্ট লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই কুর্দরাই। অথচ তুরস্ক সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে বহুদিন ধরে আমেরিকা এই লড়াকু শক্তিকে ধ্বংস করতে মরিয়া ছিল। এরদোগানের বিরুদ্ধে আরেকটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হল DHKP-C (Revolutionary People’s Liberation Party), ১৯৭৮ সালে যার জন্ম, মার্কসবাদী-লেনিনবাদী এই বিপ্লবী পার্টি তুরস্কে ড্রাগ, গণিকাবৃত্তি এবং শ্রমজীবী মানুষের ওপর তথাকথিত 'ভদ্রসমাজের' নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। Revolutionary Youth, Revolutionary Worker’s Movement, People’s Law Office, Architect and Engineers of people এবং TAYAD নামে বন্দীমুক্তি সংগঠন - এমন বিভিন্ন গণসংগঠন এই কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ১৯৯০ সালে এই বিপ্লবী পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তুরস্ক সরকার। এমনকি আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং তুরস্ক মিলিতভাবে একে 'সন্ত্রাসবাদী' তকমা দেয়। এদের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া এবং ডেনমার্কের যৌথগুপ্তচর বাহিনীও তৈরি হয়। তুরস্কের একজন স্কুলশিক্ষক নিজের বাড়ির জানালায় একটি প্ল্যাকার্ডে লিখে রেখেছিলেন 'রকেট শিল্ড নয়, স্কুলে আমরা একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাই', এই অপরাধে তাঁর ছয় বছর আট মাসের কারাদণ্ড হয়। এটা তুরস্কের খুব সাধারণ একটা ঘটনা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমা যেখানে এতখানি, তেমন একটা দেশে ১৯৮৫ সালে Grup Yorum নামে একটি গণসঙ্গীতের ব্যান্ড জন্ম নেয়। আশির দশকে পর্তুগাল, স্পেন, ল্যাটিন আমেরিকার শিল্পজগতে যে Nueva Cancion Movement শুরু হয়, তারই অনুপ্রেরণায় তুরস্কে মার্কসবাদী এই ব্যান্ডের জন্ম। এখনও পর্যন্ত ২৩টি গানের অ্যালবাম এবং একটি ফিল্ম তৈরি করেছে তাঁরা। তাঁদের প্রথম অ্যালবামের নাম Siyrilip Gelen এবং ফিল্মটির নাম F-Tipi। মুক্তির পর মাত্র ১৪ সপ্তাহের মধ্যেই সেনসরশিপ লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফিল্মটিকে। এমনকি ফিল্মের পোস্টার যাঁরা দেওয়ালে সাঁটছিলেন তাঁদেরকেও গ্রেপ্তার করা হয়। Tavir (Attitude) নামে একটি শিল্প-সাহিত্য পত্রিকা বের করেন Grup Yorum-এর শিল্পীরা। ২০১০ সালের ১২ই জুন ব্যান্ডটির ২৫তম জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্টে দর্শক সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার। ২০১১ পরবর্তী সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় দেড় লক্ষ থেকে আড়াই লক্ষ। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, গ্রীস, সিরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কনসার্টে গণসঙ্গীতের জোয়ার তুলেছেন এই শিল্পীরা। পৃথিবীজোড়া মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে যাঁরা এই পরিমাণে জাগিয়ে তোলেন, তাঁদের পথ খুব একটা মসৃণ হওয়ার কথা নয়। নিষিদ্ধ বিপ্লবী পার্টির সাথে তাঁরা যুক্ত- এই অভিযোগে ২০১৬ সালে Grup Yorumকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তুরস্ক সরকার। 'ইস্তানবুল কালচারাল সেন্টার', যেখানে ব্যান্ডের শিল্পীরা রিহার্সাল করতেন এবং একইসাথে বাচ্চাদের গান শেখাতেন, সেখানে তুরস্ক পুলিশ অতর্কিত রেইড করে এবং পিয়ানো থেকে শুরু করে সমস্ত মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট ভেঙে ফেলে, বইপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়, দরজা-জানালা বইয়ের তাক কিছুই রেহাই পায় না তাদের হাত থেকে। ঐদিন প্রায় ৪০০ জন শিল্পী গ্রেপ্তার হন। গত চার বছরে অনেকে মুক্তি পেলেও অবিরাম ধরপাকড় এখনও চলছে। বর্তমানে ৭ জন সক্রিয় সদস্য জেলে আছেন। ব্যান্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে এবং শিল্পীদের ওপর সমস্ত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে হেলিন বোলেক, ইব্রাহিম গোকচেক, মোস্তফা কোচাক অনশন করছিলেন। অনশন চলাকালীনও তাঁদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে force feeding করে অনশন ভাঙ্গানোর চেষ্টা করা হয়। বিপ্লবীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। হেলিন বোলেকের মৃত্যুর পরেও এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। "Revolutions are the festivals of the oppressed and the expolited”- লেনিনের বিখ্যাত এই কথাকে আক্ষরিক অর্থে যাঁরা সঠিক বলে প্রমাণিত করেছিলেন, তাঁদের মুক্তির দাবিকে জোরালো করুন। গোপনীয়তার রোমাঞ্চে মোড়া বিপ্লবীর যে ইমেজ আমাদের অনেকের মননে ঘুরে বেড়ায়, তাকে ঝেড়ে ফেলে বিপ্লবকে জনগণের মুক্তির উৎসবে পরিণত করার শিক্ষাকে চলুন গ্রহণ করি।

Comments


Subscribe Form

©2020 by People's News Indie. Proudly created with Wix.com

bottom of page