top of page

কুলতলী থানা এলাকায় নাবালিকা ধর্ষণ, ধর্ষক শাসক ঘনিষ্ঠ, এসপি অফিসে এপিডিআরের ডেপুটেশন

  • Writer: People's News Indie
    People's News Indie
  • Jun 10, 2020
  • 3 min read

লিখেছেন: সঞ্চিতা আলী

কাশ্মীরের আসিফা, উন্নাওয়ের মেয়েটি, গড়িয়ার সুলতানা থেকে শুরু করে সম্প্রতি কুলতলির পঞ্চমশ্রেণির স্কুলছাত্রী - এই একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ধর্ষক প্রভাবশালী এবং শাসক শ্রেণির ঘনিষ্ঠ হলে তাকে সবরকম সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রশাসন ঠিক কতদূর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। সম্প্রতি কুলতলী থানা এলাকায় এমনই একটি ঘটনা সামনে আসে। এবং সেটা নিয়ে ভুল তথ্যও উঠে আসে। সঠিক তথ্যটি পরিষ্কার ভাবে সামনে আনতেই এই লেখা। কৈখালি এক নং গ্রামের ১২ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাসুদেব মন্ডল। মেয়েটির বাবা নেই, মা কোলকাতায় কাজ করে। কৈখালিতেই দিদিমার বাড়িতে সে তার ছোটো দুই ভাইকে নিয়ে থাকে। তার দিদিমার সাথে কথা বলে গোটা বিষয়টি জানা যায়। তিনি জানান, গত ১৪ মার্চ রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তার নাতনি অন্যদিনের মতো বাড়ির দাওয়ায় বসে পড়ছিল, তিনি ভেতরে দুই নাতিকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাত ১১ টা নাগাদ বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠে তিনি দেখতে পান, নাতনি বাড়িতে নেই। এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করেন অনেক, নাম ধরে আশেপাশে অনেক ডাকাডাকি করেও তার কোনো সাড়া পাননি। অনেকক্ষণ পর টর্চ হাতে খুঁজতে খুঁজতে বাদাজমির দিকে গেলে দেখেন সে একা একা দাঁড়িয়ে কাঁদছে। বাড়ি নিয়ে আসার পর সে জানায়, প্রতিবেশী (একই সাথে তার দুঃসম্পর্কের মামা) বাসুদেব মন্ডল তাকে মুখ চাপা দিয়ে জোর করে বাদার দিকে টেনে নিয়ে যায় ও ধর্ষণ করে। এবং শুধুমাত্র সেইদিনই নয় এর আগেও তিন-চার দিন অন্তর তাকে ছ'বার রাতে পড়ার সময় জোর করে তুলে নিয়ে যায় ও কখনো ছাদে, কখনো বাদায় ধর্ষণ করে। সে যাতে বাড়ির কাউকে কিছু না বলে তার জন্য বারংবার খুনের হুমকি দেওয়া হয়, এমনকি একবার হুমকির সাথে আরো ভয় দেখানোর জন্য জোরে তার গলাও টিপে ধরে। মেয়েটি ভীষণরকম ভয় পেয়ে যায়। প্রথমদিন ধর্ষণের পর তার অনেকটা রক্তক্ষরণ হয়, যন্ত্রণা করলেও সে খুনের ভয়ে বাড়িতে কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু ৭ মার্চ বাড়িতে সবটা জানাজানি হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। শুধুমাত্র অভিযুক্ত বাসুদেব মন্ডলই নয়, তার মা সন্ধ্যা মন্ডল ও গ্রামের আরো কয়েকজন ওপেনলি হুমকি দিতে শুরু করে, কখনো "মাথার উপর ইঁট ফেলে মেরে দেবো" কখনো "ছোটো নাতিকে বালির বস্তায় পুরে মেরে দেবো" এমন নানানভাবে মেয়েটি ও তার পরিবারকে ভয় দেখাতে থাকে। নিগৃহীতার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তার স্কুলের শিক্ষক ও কয়েকজন যুবককেও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। কুলতলি থানায় গত ১৫ মার্চ বাসুদেব মন্ডলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানানো হলে থানা বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করেনি। 'পেটি কেস' বলে এফআইআর পর্যন্ত নতিভুক্ত করেনি, মেডিকেল টেস্ট তো দূরের কথা। দিদিমা বারবার অনুরোধ করলে থানার মেজোবাবু জানায় তিনি মেয়েটির দিদিমা নয়, তার মায়ের সাথে কথা বলবেন। দিদিমা তাকে জানান তার মেয়ে অর্থাৎ নিগৃহীতার মা এখানে থাকে না এবং মানসিকভাবে অসুস্থ, ফলে সে ঠিক করে বলতে পারবে না পুরো ঘটনাটা। তবুও থানা থেকে মেয়েটি ও তার দিদিমাকে বাইরে বসিয়ে রেখে তার মায়ের সাথে আলাদাভাবে কথা বলা হয়। মায়ের অজ্ঞতা ও অসুস্থতার সুযোগে থানা থেকে মুহুরি ডেকে ৪০০ টাকার বিনিময়ে অভিযুক্ত বাসুদেবের সাথে নিগৃহীতা নাবালিকা মেয়েটির বিবাহের চুক্তিপত্র লিখে তার মায়ের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। থানা থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে অভিযুক্তের শাস্তির দাবীতে এরপর দিদিমা বাড়ির দুটো ছাগল বন্ধক রেখে একহাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় এক মহিলা সমিতির কাছে গেলে তারাও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর তিনি মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এর সাথে যোগাযোগ করেন এবং আজ নিম্নলিখিত দাবিতে এপিডিআর জয়নগর শাখা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে বারুইপুর এসপি অফিসে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়। অ্যাডিশনল এসপি মেয়েটি ও তার দিদিমার কাছ থেকে পুরো বিষয়টি শোনেন। এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। যদিও মেয়েটিকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মহিলা অফিসার তাকে নানাভাবে জেরবার করেন। প্রথমবার জোর করে নিয়ে যাওয়ার পর পরের বারগুলোয় অভিযুক্ত জোর করেছিল নাকি নিগৃহীতা নিজের ইচ্ছায় গিয়েছিল - এমনসব প্রশ্ন করে চাপ সৃষ্টি করা হয়। মেয়েটি উত্তর দেওয়ার পরও অন্তত দশবার এই একই প্রশ্ন করে তাকে হেনস্থা করা হয়। মায়ের অজ্ঞতা ও অসুস্থতার সুযোগে তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া কুলতলি থানার মুহুরি ডেকে দশ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে অভিযুক্ত বাসুদেবের সাথে ধর্ষিতা নাবালিকা মেয়েটির বিবাহের চুক্তিপত্রের ছবিটি মেয়েটির নিরাপত্তার কারণে এখানে দিলাম না।

অবিলম্বে এফআইআর জমা নিয়ে অভিযুক্ত বাসুদেব মন্ডলের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। নিগৃহীতার পরিবারকে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা দিতে হবে। নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনায় এফআইআর গ্রহণ না করায় কুলতলি থানার আধিকারিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

Comments


Subscribe Form

©2020 by People's News Indie. Proudly created with Wix.com

bottom of page