খালিপেট রাত আট'টার ভাট বোঝেনা, আটার রুটি আর ভাত বোঝে।
- People's News Indie
- Apr 12, 2020
- 2 min read
লিখেছেন: শৌভিক মুখার্জী
একাধিক স্বেচ্ছাসেবী, রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তি মানুষ সম্পূর্ণ সাংগঠনিক এবং ব্যক্তি উদ্যোগে এই কঠিন সময় প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের সাধ্যমত। তাদের কুর্নিশ। আমরা এর আগেও যেকোন বিপর্যয় মোকাবিলায় দ্রুততার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাধ্যাতীত উদ্যোগ নিয়েছি। দেখেছি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশাসনেরও কি নির্লজ্জ্ব ভূমিকা থেকেছে। কিন্তু আজ এই একটি ভাইরাস এবং ভঙ্গুর পরিকাঠামো আমাদের এমন অবস্থার সামনে দাঁড় করিয়েছে, আমরা জানি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে না পারা গেলে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, প্রতিঘরে খাদ্য ও অর্থের দাবি না তুললে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা সম্ভব না। কারণ আমরা জানি এইমুহূর্তে আমরা যতটুকু করতে পারছি সেই পেরিফেরির বাইরে আছে আরেক ভারতবর্ষ, যেখানে এখনো মানুষ বিনাচিকিৎসায়, অনাহারে মারা যায়, প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে।

(ছবি এঁকেছেন: শিল্পী অজয় বসু)
অবিলম্বে এফ সি আই এর স্টক খুলে দিয়ে (প্রায় কুড়ি বছরের মজুত) গুদামজাত খাবার পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম কে আরো শক্তিশালী এবং একাউন্টেবেল রেখে প্রতিটি পরিবারে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণ টাকা সরকারের কাছে রয়েছে, এছাড়া অন্যান্য ডোনেশন পিএমকেয়ার সব দিয়ে হেলথে, হাসপাতাল গুলিতে ব্যাপক খরচ করতে হবে, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ বন্ধ করে জাতীয়করণ করতে হবে। গ্রামীন স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি করে সেগুলির সংখ্যা বাড়াতে হবে। এই মুহুর্তে ব্যাপক টেস্ট প্রয়োজন, দরকারে দেশের ১০০০০ মলিকিউলার টেস্টিং ল্যাব গুলিকে সেই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হোক। নার্স এবং ডাক্তারদের পর্যাপ্ত পিপিই, স্বাস্থ্য কর্মী থেকে সাফাইকর্মী সকলকে সুরক্ষা ও সমস্ত সুযোগসুবিধা দ্রুত দিতে হবে। শুধুমাত্র রক্তাল্পতা, আন্ত্রিক, অপুষ্টিতে প্রতি বছর মারা যান কয়েক লক্ষ মানুষ। মারা যান কয়েক লক্ষ টিবি রোগী (গোটা বিশ্বের মোট এক-চতুর্থাংশ)। করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি অন্যান্য রোগীদের নিরাপদ দূরত্বে রেখে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে হবে। কেউ যেন চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
মেহনতি শ্রমিকশ্রেণীর স্বার্থে কোনো ওয়েলফেয়ার স্কিম, এনআরইজিএ, আইসিডিএস বা এজাতীয় কোনো খাত থেকে একটি পয়সাও না কেটে আম্বানি আদানির মত কর্পোরেট সেক্টরের ঋণ মকুব না করে (যা প্রায় বছরে ১লাখ ৪৫হাজার কোটি) সেই টাকায় দেশের কোটি কোটি মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের জন্য মাসিক ইনকাম দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সংগঠিত ও অসংগঠিত সমস্ত ক্ষেত্রে কর্মী ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশে বহু জায়গা রয়েছে যেখানে এমন হাজার হাজার প্রান্তিক মানুষের বাস যাদের ব্যাঙ্ক আকাউন্ট নেই, রেশন ঠিকমতো পাননা, পাননা নূন্যতম চিকিৎসা পরিষেবাটুকুও। এদের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশানসনকে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বসহকারে সমস্ত কিছু পৌঁছে দেওয়া অন্যতম কর্তব্য। সমস্ত ক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্থানীয় ক্লাব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা বিরোধী দলের কর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে সমস্ত মানুষের কাছে পর্যাপ্ত খাবার, ওষুধ, মাসিক টাকা, সেল্টারের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছে দেওয়ার দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে মেডিকেল গাইডলাইন্স মেনে। কারণ, এরকম যদি বেশিদিন চলতে থাকে তাহলে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবে। এখন রেশন ডিলার ঘেরাও করছে, এরপর বড় বড় আড়ৎদার দের গুদাম লুঠ করবে সাধারণ মানুষ। করবেই, কারণ খালিপেট রাত আট'টার ভাট বোঝেনা, সে আটার রুটি আর ভাত বোঝে।
শুধুমাত্র পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে লকডাউন করিয়ে, হাততালি দিয়ে থালা বাটি বাজিয়ে, গো মূত্র খেয়ে, আইটিসেল আর মিডিয়া দিয়ে দেশ জুড়ে ইসলামোফোবিয়ার চাষ করে আর যাই হোক করোনা মোকাবিলা হবেনা।
Comments