top of page

পালঘর মব লিঞ্চিং ও ইসলাম বিদ্বেষ

  • Writer: People's News Indie
    People's News Indie
  • Apr 20, 2020
  • 4 min read



গত বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার কাসা তালুকের অন্তর্গত গড়চিঞ্চালে গ্রামে দুজন সাধু ও তাদের গাড়ির চালককে মব লিঞ্চিং করে খুন করা হয়৷ ঘটনা কি ছিল? দুজন সাধু, যথাক্রমে কলপভরুক্ষ গিরি(৭০) ও সুশীলগিরি মহারাজ(৩৫) তাদের আশ্রমের নিকট কান্দিভালি থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করেন। গাড়ির চালক ছিলেন নীলেশ ইয়েলগারে(৩০)। তারা একটি শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সুরাটের দিকে রওনা হয়েছিলেন। মেইন রাস্তায় লকডাউনের কারণে ধরপাকড় চলছিল, তাই সেই সমস্যা এড়াতে তারা গ্রামের পথ নেয়৷ গড়চিঞ্চালে গ্রামে গাড়ি ঢুকতেই তাদের গাড়ি থামানো হয়৷ গাড়ি থেকে বের করে ২০০ জনের মব উন্মত্তের মতো লাঠি, পাথর, বাঁশ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই তিনজনের ওপর। পুলিশ খবর পেয়ে এলেও পুলিশের সামনেই গণপিটুনি চলতে থাকে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, অসহায় কলপভরুক্ষ গিরি উন্মত্ত জনতার হাত থেকে বাঁচতে পুলিশের হাত জড়িয়ে বাঁচার প্রার্থনা করে চলেছেন৷ কিন্তু দু চারজন পুলিশ ওই ২০০ জনের সামনে নিরুপায় নিরব দর্শক হয়ে থাকল, সেই সুযোগ নিয়ে ওই সাধুকে তাড়া করে মারতে মারতে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিল জনতা৷ অবশ্য এর কিছুক্ষণ পরে পালঘর জেলা পুলিশ বিরাট বাহিনী নিয়ে এসে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে ও শূণ্যে গুলি চালায়। যদিও ওই তিনজনকে বাঁচানো যায়নি৷ তবে গ্রাম থেকে ১১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশ জানিয়েছে দোষীদের ধরার বিষয়ে তারা তৎপর। কারা মারল? এবং কেন? গত বেশ কিছুদিন ধরেই কাসা তালুকের বিভিন্ন গ্রামে উড়ো খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে বিভিন্নভাবে বাইরের থেকে চোর এসে গাছের ফলমূল, বাড়ির বাচ্চা চুরি করতে পারে। একেই লকডাউনের ফলে গ্রামের খাবারের সঙ্কট তারপর এই উড়ো খবর এসে পড়ায় গ্রামের মানুষ কিছুটা তেতেই ছিল। সেইজন্য শুধু গত সপ্তাহেই তিনটে গণপিটুনির খবর পাওয়া গেছে। সাধুদের মেরে ফেলার ঘটনাটি তৃতীয়। তা, এই সাধুরা বৃহস্পতিবার গাড়ি নিয়ে ওই গ্রামে পৌঁছালে তাদের চোরসন্দেহ করা হয় ও সেই সন্দেহের বশেই তাদের মেরে ফেলা হয়। গ্রামবাসীদের ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয় কি? ২০১১ সালের জনবিন্যাস অনুসারে গড়চিঞ্চালে গ্রামে মোট ২৪৮টি পরিবারের বসবাস। মোট জনসংখ্যা ১২৯৮ জন। এই জনসংখ্যার ৯৩% আদিবাসী। পুরো গ্রামের স্বাক্ষরতার হার মাত্র ৩০%। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই দিনমজুর ও শ্রমিক। ধর্মীয়ভাবে সংখ্যাধিক্য মানুষ খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত। মৃত সাধুদের ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয় কি? তারা কান্দিভালি এলাকার একটি আশ্রমে থাকতেন। দুজন সাধুই যাযাবর গোষ্ঠী গোসাভি সম্প্রদায়ের মানুষ।ঐতিহাসিক কারণে মহারাষ্ট্রে যাযাবর গোষ্ঠীরা তফশিলি জাতির আওতায় পড়ে কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে তফশিলি উপজাতির আওতায় পড়ে। এই দুই সাধু বারাণসীর সনাতনী সংগঠন "জুনা আখড়া" সদস্য সুতরাং বলা চলে তারা সনাতনী অর্থাৎ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ভারতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন মব লিঞ্চিং এর সাথে এই ঘটনার ফারাক কোথায়? মব লিঞ্চিং সংস্কৃতি দেশে আমদানি করে বিজেপি। ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের গত কয়েকবছরে বহুবার লিঞ্চ করে মেরে ফেলা হয়েছে এবং সেখানে মেরে ফেলার আগে বলিষ্ঠ কন্ঠে হিন্দুত্ববাদের জয়ধ্বনী দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকবার মৃতপ্রায় মুসলিম লোকজনদের দিয়েও "জয় শ্রী রাম" ধ্বনি দেওয়া হয়েছে জোরজবরদস্তি। এই ঘটনার কোনো ধর্মীয় ও জাতিগত দৃষ্টিকোণ নেই। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও কোথাও কোনো ধর্মীয় শ্লোগান শোনা যায় নি, ফলত বাকি ঘটে যাওয়া মব লিঞ্চিং এর কারণের সাথে এর কারণের ফারাক রয়েছে। আরএসএস চালিত মিডিয়া ও আইটি সেল ফেসবুক টুইটার ও হোয়াটসঅ্যাপ কি প্রচার চালাচ্ছে? গতকাল থেকে টুইটারসহ ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে এই মব লিঞ্চিং এর ঘটনাকে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা সংঘটিত বলে ছড়িয়ে দেওয়া চলছে৷ কোথাও কোথাও 'শান্তিবাহিনী' আবার কোথাও কোথাও 'জেহাদি' ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করা হচ্ছে৷ পুলিশও যেখানে গ্রেপ্তার করেছে আদিবাসীদের সেখানে মুসলমানদের নাম না থাকাটা হয়ত তাদের পেটের ভাত হজম করতে বাঁধা দেবে৷ তাই একটি সর্বৈব মিথ্যাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে বিশ্বাস করানো ও মানুষের মনে আরো ইসলামোফোবিয়ার বিষ ঢোকানোই তাদের লকডাউনের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ আবার ভিডিওর মধ্যে 'মার ইসকো শোয়েব', কেউ কেউ আবার 'মার ইসকো সোহেল' শুনতে পাচ্ছেন৷ আমি বার দশেক ভিডিওটি শুনতে বাধ্য হলাম এবং কোথাওই শোয়েব বা সোহেলের নাম উচ্চারিত হতে শুনলাম না৷ শুনলাম উন্মত্ত জনতার চিৎকার। বিজেপিসহ হিন্দুত্ববাদীদের জন্য বার্তা কি থাকবে? যারা পশ্চিমবঙ্গে মব লিঞ্চিং বিরোধী বিলের পক্ষে ভোট দেয়না তারা এখন মব লিঞ্চিং এর বিরোধীতায় নেমেছে৷ বিজেপির দ্বিচারিতা আজ প্রকাশিত৷ মুসলমানদের মেরে কেটে ফেললে বিজেপির ছিঁটেফোঁটা সমস্যা ছিল না, কিন্তু আজ যখন আদিবাসীরা হিন্দু সাধুদের মব লিঞ্চিং করছে তখন ভারতে মব লিঞ্চিং এর জন্মদাতারাই এর বিরোধীতা করছে। এই সংস্কৃতি স্বাভাবিক তৈরী করে ফেলেছে এই গেরুয়া বাহিনীই৷ তাদের দেখানো পথেই হেঁটেই অপরাধের শিকার হচ্ছে মানুষরা৷ এই আপামর ভারতের জনগণকে বিপথে চালিত করার দায় বিজেপি নেবে না? উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ওপরে দোষারোপ করা বন্ধ করুক বিজেপি। লকডাউনের সময়ে মানুষকে খেপিয়ে তোলা বন্ধ হোক। সরকার এই অপপ্রচারকাীদের গ্রেপ্তার করুক। ফেসবুকে এই হিংসামূলক পোস্ট ঠেকাতে কি করা যায় আপাতত? মিথ্যা অপপ্রচার দেখামাত্রই পোস্টগুলি রিপোর্ট করতে হবে, কলকাতা পুলিশের পেজে দিতে হবে, তাছাড়া সিআইডি এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে দ্রুত৷ তাদের মেইল এড্রেসে মেইল করা যেতে পারে।

পালঘর মব লিঞ্চিং নিয়ে কোনো ইসলাম বিদ্বেষী পোস্ট, কোনো ভুয়ো তথ্য দেওয়া পোস্ট দেখলে নীচের ইমেইল এড্রেসে পোস্টের লিঙ্ক, প্রোফাইলের লিঙ্ক ও পোস্টের স্ক্রিনশটসহ নিজের নাম, ঠিকানা দিয়ে মেইল করুন।

মেল আইডি - occomp.cid-wb@gov.in অনুরোধ রইলো: দেশে ঘটে যাওয়া আরো একটি মব লিঞ্চিং এর ঘটনা একেবারেই অনভিপ্রেত। আরো অনভিপ্রেত যখন গুজবের শিকার হয়ে দুজন নির্দোষ সাধুকে প্রাণ দিতে হয়। এই মৃত্যুর বিরোধিতা হোক, মব লিঞ্চিং এর বিরোধিতা হোক, দোষীদের শাস্তির দাবী জানানো হোক কিন্তু অনুরোধ রইল ঘটনাটি না জেনে, না খোঁজখবর নিয়ে শুধুমাত্র ভিডিও দেখে রক্ত গরম করে পোস্ট দিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন কিংবা কোনো পোস্টে মুসলিম বিদ্বেষী কথাবার্তা থাকলে সেগুলো যাচাই করুন, পোস্টদাতাকে প্রশ্ন করুন। অসতর্কতার শিকার হয়ে ইসলামোফোবিকদের ফাঁদে পড়বেন না। সাধুদের বা গেরুয়াবসন পরিহিত মানুষদের মারছে, সুতরাং তারা মুসলমান ছাড়া আর কেউ না, এই বোকা বোকা সরলীকরণে যাবেন না। এই কঠিন সময়ে যারা ভুলবার্তা দিয়ে আমাদের বিভক্ত করতে চায় তারা নরাধম, তাদের বয়কট করুন।


লিখেছেন: আকাশ সরকার (তথ্যসংগ্রহ- বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন ও উইকিপিডিয়া)

Comments


Subscribe Form

©2020 by People's News Indie. Proudly created with Wix.com

bottom of page