top of page

পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা, কিছু কথা কিছু ভাবনা

  • Writer: People's News Indie
    People's News Indie
  • Mar 30, 2020
  • 4 min read

পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা,

কিছু কথা কিছু ভাবনা

লিখেছেন : অরিন্দম দে

29/03/2020

কাল সন্ধ্যা থেকেই ফেসবুকে দিল্লির আনন্দবিহারের কিছু ছবি এবং ভিডিও ঘুরছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে হাজারে হাজারে মানুষ (মাইগ্রেন্ট লেবার) ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য। বিস্তারিত ঘটনায় যাওয়ার আগে মাইগ্রেন্ট লেবার নিয়ে একটু বলে রাখি, মূলত পেটের তাগিদেই বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, উড়িষ্যা, রাজস্থান, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে ঠিকাদার বা কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে পাড়ি দেয় দিল্লি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, আহমেদাবাদের মতো বড়ো বড়ো শহরে। এদের কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মী, কেউ গার্মেন্ট শ্রমিক, কেউ আবার কারখানার শ্রমিক। সস্তায় শ্রম কিনতেই এদের শহরে আমদানি করে পুঁজিপতিরা। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। কাল থেকে কাঁধে ব্যাগ বাচ্চাসহ যে লোকগুলোকে দেখা যাচ্ছে তাদের গ্রাম মূলত উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশে। ২১ দিনের লক-ডাউন ঘোষণা হওয়ার পর কোম্পানি লেবারদের বাড়ি ফিরে যেতে বলে, তড়িঘড়ি ব্যাগপত্র গুছিয়ে কিছু মানুষ গ্রামে ফিরে আসতে পারলেও ফিরতে না পারা মানুষ গুলো পড়ে চরম দুর্ভোগে। মাথা গোঁজার আস্তানাটুকুও হারিয়ে যায় তাদের। কাজ করে যা রোজগার হয় সবই তাঁরা গ্রামের বাড়িতে পাঠান, তাই খাবার টাকাও শেষ হয়ে আসে। সরকারি ত্রাণ সবার কাছে না পৌছানোয় ২-৩ দিন না খেয়েই কাটে একাংশের। এদিকে বাড়ি ফিরতে চায় মানুষ গুলো, সেই ব্যবস্থা টুকুও নেই। কেউ কেউ আবার ৫০০-৬০০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁঁটেই রওনা দিয়েছেন গ্রামের উদ্দেশ্যে। গত কালকের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর উত্তরপ্রদেশ সরকার ৫০০ সরকারি বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ গুলো হয়তো ঘরে পৌঁছে যাবে, কিন্তু তার পর! দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার অসংগঠিত রেজিস্টারড নির্মাণ শ্রমিকদের একটি ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেছে। কিন্তু যারা কনস্ট্রাকশন বোর্ডের রেজিস্টারড নয় তাদের কী হবে! আর যারা রেজিস্টারড তারা কীভাবে পাবে তারও কোনো বিশদ বিবরণ সরকারের তরফে দেওয়া হয়নি। বাকি পড়ে থাকা অন্যান্য অসংগঠিত শ্রমিকদের তাহলে কী হবে? ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তো আর আপনি গরীব কি বড়োলোক তার কোনো বিবরণ দেওয়া থাকে না। ২৪ তারিখ কেন্দ্রীয় শ্রম দপ্তর ঘোষণা করে 1996 Building and others construction workers act -র SEZ এর মাধ্যমে ৫২ হাজার কোটি টাকা Construction welfare board র রেজিস্টারড ৩.৫ কোটি নির্মাণ শ্রমিক দের দেওয়া হবে। কিন্তু সব বিল্ডাররা তো লেবার রেজিষ্ট্রেশন করায় না।একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন, দিল্লিতে ১০ লক্ষের বেশি নির্মাণ শ্রমিক কাজ করেন (ইলেক্ট্রিক,প্লাম্বার,রং মিস্ত্রি বাদে), তাদের মধ্যে মাত্র ৩১০০ জন Delhi Construction workers board এ রেজিস্টারড, তাহলে কল্পনা করুন পুরো দেশের চিত্রটি। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মধ্যবিত্তের এই ভিড়ের দৃশ্য দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ, চিন্তার কারণ এই নয় যে মানুষ গুলো খাবার পাচ্ছে না বা ঘরে ফিরতে পারছে না।বরং করোনা সংক্রামণের কারণ হিসাবে এই "অশিক্ষিত ছোটলোক" দেরই দায়ী করছেন অনেকে। আর সোস্যাল ডিস্টেনসিং...পরিহাস! অনেক আগে থেকেই মানুষ এটা পালন করছে রাম এবং রহিমের মধ্যে, ৫০০০ এবং ৫০০০০ -র মধ্যে। কখনো ভেবে দেখেছেন কেন এই মানুষ গুলোকে পেটের তাগিদে গ্রাম ছেড়ে ভিন রাজ্যের শহরে যেতে হয়? কেন গ্রামের কোনায় কোনায় শিক্ষার আলো পৌছায় না? কেন স্বাস্থ্য খাতে খরচ জিডিপির ১% ? কেন বড়ো বড়ো ইমারত তৈরি করার কারিগর দের একটি টিনের ঘরে ১৫-২০ জনকে থাকতে হয়? কেন বিল্ডাররা লেবার রেজিষ্ট্রেশন না করিয়েও পার পেয়ে যায়? কেন সঠিক শ্রমমজুরি পায় না মজদুর রা?আসলে সবকিছুই প্রফিট মেক্সিমাইজেশন। আজকের এই ভিড় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আপনাদের ভোটে নির্বাচিত সরকার পুঁজির দালালি করছে। আর সাধারন খেটে খাওয়া মানুষেরা যেন বিক্ষোভে ফেটে না পড়ে তাই তাদের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে কিঞ্চিৎ নগন্য কিছু উচ্ছিষ্ট।।

নীচের অংশটি সংযুক্ত করেছেন ড: অমিতাভ আইচ


পরিযায়ী শ্রমিকেরা শুধু এই রাজ্যগুলো থেকেই ওই সব রাজ্যে যায় এমন নয়। বিপুল এমন শ্রমিক এ রাজ্যেও আছে, এবং তারা পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো থেকে বিশেষ করে বিহার, উত্তর প্রদেশ ও ঝাড়খন্ড থেকে আসে। এমনকি বিপুল পরিমাণ পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্র, রাজস্থান বা দক্ষিণ ভারত থেকেও আসে। নানা ধরনের কাজে নানা জায়গার শ্রমিকের চাহিদা। এখন খবরগুলিতে দিল্লি ও নয়ডার রাস্তা থেকেই প্রথম আসায় দিল্লি আর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী রিঅ্যাক্ট করেছে। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছে। এটা একটা মানবিক বা অমানবিকতার সূচকও বটে। আমাদের জানতে হবে বিভিন্ন শহর থেকে এই ট্রেক টু হোম এর শতাংশ কোন বড় শহরে কতো, (সংখ্যা নয়) এবং কেনো, কোন শহরে কাজ হারানোর সংখ্যা কেমন? কোন শহর বা সরকার এই শ্রমিকদের লোকেশনে রাখতে কতো ব্যবস্থা করেছেন? এগুলো প্রমাণ করে দেবে সেই শহর ও রাজ্যের মানবিক, সামাজিক ও অবশ্যই অর্থনৈতিক সূচক কোথায় দাঁড়িয়ে। আরেকটা বিষয় এই বিপুল শ্রমিকদের গ্রামে পৌছানো শুধু দূরত্ব ও বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কঠিন নয়, আরও মারাত্মক হবে কারণ গ্রামগুলো এদের অনেকেই আতংকের কারণ এখনই ফেরৎ নিতে চাইবে না। শুরু হবে সামাজিক সমস্যা। এই কথা মাথায় রেখে সব রাজ্য সরকারকে জেলা পরিষদের মাধ্যমে কোয়ারান্টাইন সেন্টার করতে বলা হয়েছে। আজকের খবর হল, এই শ্রমিকদের একটি রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে প্রবেশ করা আটকাতে বর্ডার সিল করে লোকেশনে থাকতে বাধ্য করার জন্য ক্যাম্প করার নির্দেশ জারি হচ্ছে। এক কথায় অতুলনীয় হিউম্যান ট্র্যাজেডি। এখনও পর্যন্ত একজনও গরীব ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষ বা কৃষক কোভিড ২০১৯ এ আক্রান্ত নয়। তার একটা কারণ হতে পারে কম টেস্ট, মানে আমরা জানিই না, আর একটা হলো ভারতের স্বাভাবিক ও চিরকালীন সামাজিক দূরত্বের সভ্যতা এই মানুষগুলিকে বাঁচিয়ে দিয়েছে (হাসপাতালএর শ্রমিকরাও এর মধ্যে পড়বে, লক্ষ্যনীয় ভাবে একজনও অফিসিয়ালি ইনফেক্টেড নয়) আর লকডাউনের পর ইনফেকটেড মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত, মানে সমাজের মুল সুবিধাভোগী ক্রিমি লেয়ার ঘরে ঢুকে পড়েছে। গ্রামীণ ও গরীব ভারতের জন্য এটাই একমাত্র রুপোলী রেখা হতে পারে। তবে এই ভারতের কাছে যদি রিলিফ না পৌঁছায় আর পরবর্তী কালে এদের রুজিরুটির বন্দোবস্ত না হয় তবে কোভিড ২০১৯ এর সবচেয়ে ভয়ানক হিউম্যান ট্র্যাজেডি ভারতে হবে এবং সেটাও নন-মেডিকাল কারণেই।

Comments


Subscribe Form

©2020 by People's News Indie. Proudly created with Wix.com

bottom of page