top of page

বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রভাব: আজ ধ্বংসের মুখে জম্মু-কাশ্মীরের বাস্তুতন্ত্র 

  • Writer: People's News Indie
    People's News Indie
  • Aug 17, 2020
  • 6 min read


ছবি: সঞ্চিতা আলী

(এই প্রতিবেদনটি কাশ্মীর রিডিং রুমে ২০১৯ এর আগষ্ট থেকে ২০২০ র আগষ্ট পর্যন্ত অর্থাৎ ধারা ৩৭০ বিলোপের এই একবছরে প্রকাশিত একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের অংশ। লিখেছেন মুম্বাই নিবাসী বন আইন ও অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বাধীন গবেষক সুস্মিতা ভার্মা। বাংলায় অনুবাদ করেছেন সঞ্চিতা আলী। কর্পোরেট আগ্রাসন, জম্মু কাশ্মীরের বনভূমি, তার বিবর্তন, বন সম্প্রদায় গুজ্জর- বাখরওয়ালাদের অধিকার, ভঙ্গুর ঝিলমের আশেপাশে খনির বিষয় নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্তের বিশ্লেষণ ও আলোচনা) কথায় আছে "আন পেশি তেলি ইয়েলি ওয়ান পোশি।" কাশ্মীরে বহুল প্রচলিত এই কথার অর্থ হল - যতদিন বনজঙ্গল থাকবে ততদিন পেট ভরবে। কাশ্মীরের মানুষের জীবনের সাথে বনজঙ্গল যে কতটা ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে তা বলাই বাহুল্য। একটা সূক্ষ্ম পরিবেশগত ভারসাম্য আছে কাশ্মীরে। সেখানকার কৃষিকাজ এবং জ্বালানি খাতের উপর ওই অঞ্চলের চিরসবুজ এবং ঘন বনাঞ্চলটির প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষণীয়। বহু সাধু ও শেখ উল আলমের মত কবির কবিতায় এই বনের ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা জনপ্রিয়ভাবে উঠে এসেছে। কিন্তু বনাঞ্চলটির এমন সুস্পষ্ট প্রভাব থাকা সত্ত্বেও এই বনভূমির উপর গত তিন দশক ধরে নেমে এসেছে নজিরবিহীন আক্রমণ। একইসাথে ভয়ানক ধ্বংসলীলা ও সামরিকীকরণের মুখোমুখি হতে হয়েছে এই বনভূমিকে। উপরন্তু, জম্মু কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা বিলোপের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু কাশ্মীর পুনর্গঠন( Jammu and Kashmir Reorganization Act) আইনটি ভারতীয় সাংসদে পাশ করেছে। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে এই আইন বলবৎ হয়। এই আইন অনুযায়ী, জম্মু কাশ্মীরের পূর্বের ১৫৩ টি আইন বাতিল করা হয়েছে, পূর্বের ১৬৬ টি আইন আগের মতোই বহাল থাকছে এবং নতুন ১০৬ টি আইন বলবৎ হয়েছে। যদিও এতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ নেই কোন ভারতীয় আইনগুলি এখানে প্রযোজ্য আর কোনোগুলো ইতিমধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে। যেমন, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য বনবাসী ( বন অধিকার স্বীকৃত) আইন, ২০০৬ এখানে প্রযোজ্য হলেও এখনো পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ৩৭০ ধারা সংশোধনের পূর্বে রাজ্যের বনগুলি জম্মু কাশ্মীর বন আইন, ১৯৮৭ দ্বারা পরিচালিত হত। কারও কারও মতে এই বন আইনটি এই উপত্যকার বনজঙ্গল রক্ষার জন্য এক শক্তিশালী আইন ছিল। ৩৭০ ধারা সংশোধনের পরবর্তীতে কাশ্মীরে দ্রুত বনজঙ্গল সাফাই : ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ২০১৭ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ অর্থাৎ দু'বছর আগের বনভূমির নিরিখে গড়ে ২৫৩ বর্গকিমি বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, যে ২৫৩ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে ২৪৫ বর্গকিমি অঞ্চল লাইন অফ কন্ট্রোল (LOC) অর্থাৎ দেশের নিয়ন্ত্রণ রেখার বাইরে অবস্থিত। যদিও ১৯৪৮ সাল থেকে এই অংশটি পাকিস্তান শাসিত হওয়া সত্ত্বেও ভারত রাষ্ট্র এটিকে সরকারিভাবে নিজেদের বলে দাবি করে, এমনকি মানচিত্রে ভারতীয় ভূখন্ডের মধ্যেই এই অংশটি অন্তর্ভুক্ত করে। কাশ্মীরের দক্ষিণাংশে পহেলগাঁও এর চারিধারে ঘন বনজঙ্গল ঘেরা ক্ষেত্রটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু ১৯৬১ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত এখানকার প্রায় ১৯১ বর্গকিমি বনভূমি ধ্বংস হয়েছে মূলত অবৈধ নির্মাণের কারণে। হিসেব করে দেখা গেছে এই ক্ষতির হার বছরে গড়ে প্রায় ৩.৯ বর্গকিমি। বুদগাম(৬১ বর্গকিমি), বারামুল্লা(৩৪ বর্গকিমি), ও পুলওয়ামা(২১ বর্গকিমি) - মূলত যেসব জেলাগুলোতে বনাঞ্চলের বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে, সেখানে আদৌও বনভূমির কোনো বিকাশ ঘটে নি, কেবল উদ্যানের স্থানান্তর ছাড়া। বন উপদেষ্টামূলক সংস্থা (Forest Advisory Committee/FAC) হল একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা যা মূলত এ রাজ্যে অ-বনজ কার্যে ব্যবহারের জন্য বনভূমি বিবর্তনের প্রশ্নে রায় দিয়ে থাকে। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ অক্টোবর মাত্র এই ৩৩ দিনের ব্যবধানে এই সংস্থাটি ৭২৭ হেক্টর বনভূমির বিবর্তনের কাজকে অনুমতি দেয়। এমনকি অগুনতি গাছ কাটায়ও সংস্থাটি অনুমোদন দিয়েছে, সংখ্যাটা ১৮০০ এর চেয়েও বেশি। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, এই বিবর্তিত জমির ৬০% অনুমোদিত হয়েছে রাস্তা তৈরির কাজে। এবং সরকারি নথি অনুসারে, পিরপাঞ্জল(Gulmar Wildlife Sanctuary), ঝিলাম উপত্যকা, সাম্বা ও জম্মু বনবিভাগে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্য বিবর্তিত জমির ৩৩% (২৪৩ হেক্টর) অনুমোদিত হয়েছে। সরকারি তথ্যের একটি পর্যালোচনা থেকে স্পষ্ট, এই অঞ্চলে এক ভয়ানক জমি লুঠের খেলা চলছে। এখনো পর্যন্ত কাশ্মীরের ২০৩০২০ একর সরকারি জমি থেকে ওই অঞ্চলের ১২০০০০ কানাল (১৫০০০ একর) জমি শিল্পক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এই জমিটির বেশিরভাগ অংশই পরিবেশগত ভাবে ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এই অংশটি নদী, প্রবাহ এবং অন্যান্য জলাশয়ের সাথে হয় সরাসরি যুক্ত নয়তো এগুলির খুবই কাছাকাছি। আরও আশ্চর্যের বিষয়, এই বিবর্তিত বনভূমির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে। পিরপাঞ্জল(Gulmarg Wildlife Sanctuary), কেহমিল, ঝিলাম উপত্যকা, সাম্বা ও জম্মু বনবিভাগে ৭২৭ হেক্টর বনভূমির ৩৩%(২৪৩ হেক্টর) এক্ষেত্রে অনুমোদিত হয়েছে গতবছর ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে। এমন একটা সিদ্ধান্ত এইভাবে চটজলদি গ্রহণের পেছনে আসল কারণ ছিল ২০১৯ এর ৩১ অক্টোবর থেকে জম্মু কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন কার্যকরের মধ্য দিয়ে জম্মু কাশ্মীরের বনভূমি ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করা।

ছবি: সঞ্চিতা আলী


বালির খনন : পূর্বে ঝিলাম ও তার শাখানদীগুলিতে বিশাল পরিমাণে খননকার্যের বিরুদ্ধে যে সরকারি সতর্কতা জারি ছিল তা খোদ কেন্দ্রীয় সরকারই উলঙ্ঘন করে এবছর ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ নদীতে বালি ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের খনির জন্য প্রায় ২০০ টি ব্লক খোলার প্রক্রিয়া শুরু করে। সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের(Department of Irrigation and Flood Control/IFC) অনুরোধে কেন্দ্রীয় জল ও বিদ্যুৎ গবেষণা কেন্দ্র(Central Water and Power Research Station/CWPRS) দ্বারা প্রস্তুত ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে নদীর পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে । "উচ্চগতি থেকে আসাম পর্যন্ত ঝিলামের মূল প্রবাহে বালির বা যেকোনো খননকাজ ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কেবল CWPRS এর কর্মকর্তাদের ট্যুর রিপোর্টের সুপারিশ অনুসারে, জলপথ চওড়া করে সম্ভবত কয়েকটি জায়গায় পুনরায় বিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।" এই গবেষণাটি বিশ্বব্যাংক সমর্থন জানিয়েছিল। নদীর দুর্বল ও ভগ্নপ্রায় দশা সম্পর্কে সতর্কবার্তাসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ সত্ত্বেও ঝিলাম ও তার শাখানদীগুলিতে খনিজ ব্লকগুলির নিলাম শুরু হয়ে গেছিল ২০১৯ এর ডিসেম্বরে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ও পরবর্তীতে অত্যন্ত ধীর গতির নেট পরিষেবার কারণে মূলত অ-কাশ্মীরিরাই এই নিলামে জয়লাভ করেন। জম্মু কাশ্মীরের পরিবেশগত মূল্যায়ন কমিটি নামক একটি সংস্থা খনন ও অন্যান্য প্রকল্পগুলিকে মূলত পরিবেশগত ছাড়পত্র দিয়ে থাকে। এই কমিটির এক সদস্য(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ট্রিপল.কমকে বলেছেন, "তারা গতবছর ডিসেম্বরে এক মিটিংয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছিল ঝিলাম ও অন্যান্য নদীতে কোনো রকম খননকার্যের অনুমতি দেওয়া উচিত নয় যতক্ষণ না পর্যন্ত নদী অববাহিকা ভিত্তিক একটা বৈজ্ঞানিক খনি পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে যাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে নদীর কোনো অঞ্চল খনির জন্য উপযুক্ত আর কোন অঞ্চল নদী অভয়ারণ্যের জন্য।" ২০১৪ সালে কাশ্মীরের মানুষ ভয়ংকর বন্যা দেখেছেন, ফলে তাঁরা এই ভেবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন যে এই অত্যধিক খননকার্য কাশ্মীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পাশাপাশি স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের উপরও এক মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। তথ্যের ঘাটতি : অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে তথ্যের ঘাটতি সর্বাধিক। লকডাউনের কারণে জলবায়ুগত পরিবর্তন এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সকল গবেষণা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তথ্যের ঘাটতি পূরণ করতে যে ধারাবাহিকভাবে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছিল সেই প্রক্রিয়া পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। নতুন নীতিগুলোর প্রভাব রাজ্যের উপর কতটা? এই অঞ্চলের অধিবাসী এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটা বড় অংশ মনে করেন যে জম্মু কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯ এর অন্তর্ভুক্ত বনআইনগুলি সবকটাই কেবল নামমাত্র। নাদিম কাদরী, একজন পরিবেশ আইনজীবী ও সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ল এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, "আগে জম্মু কাশ্মীরের আইনগুলি অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল কারণ সেগুলো মহারাজার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।" কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। সাথে এখন যোগ হয়েছে কোভিড লকডাউন। এই ধরণের অব্যবস্থাপনা ও বিভ্রান্তির সুযোগে কাশ্মীরে কাঠ পাচারের পথ আরও সুগম হয়েছে। আরেকটি উন্নয়নমূলক কার্যের ক্ষেত্রে জম্মু কাশ্মীরের সাধারণ প্রশাসনিক বিভাগ(General Administration Department/ GAD) এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একটা নিবন্ধিত সংস্থা (registered company) হিসেবে জম্মু-কাশ্মীর বন বিভাগ কর্পোরেশন (JKFDC) তৈরির কাজে অনুমোদন দিয়েছে জম্মু কাশ্মীর রাজ্য বন কর্পোরেশন অ্যাক্ট,১৯৭৮ বাতিলের পর। যাযাবর ও উপজাতি সম্প্রদায়ের অবস্থা : ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, কাশ্মীরের মোট জনসংখ্যার ১১.৯% তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। তবে, এ রাজ্যের উপজাতি অধিকার কর্মীরা দাবি করেন যে গুজ্জর এবং বাখারওয়ালদের জনসংখ্যা ১২ কোটি অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ২০%। গুজ্জর ও বাখারওয়াল হল কাশ্মীরের দুই যাযাবর উপজাতি। মার্চ মাস এগিয়ে আসতেই উপজাতিদের মধ্যে অনেকে সমভূমি(জম্মু) ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে কাশ্মীরের দিকে চলে যান। এঁনারা এক নিরাপত্তাহীন অনিশ্চিত জীবনযাপন করেন, কেউ কেউ বেঁচে থাকার তাগিদে ভিক্ষা করতে পর্যন্ত বাধ্য হন। কিন্তু প্রথাগতভাবে এই গুজ্জররা দুগ্ধ ব্যবসার সাথে যুক্ত, অন্যদিকে বাখারওয়ালরা গবাদি পশুপালনের সাথে। এই উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেরাই যে বনকে পাহারা দেয়, বনকে কাঠ মাফিয়াদের হাত থেকে রক্ষা করে একথা কারোর অজানা নয়। কাশ্মীরে চলমান সংঘর্ষের কারণে বাখারওয়ালরা দ্বিগুণ শোষণের শিকার। একদিকে বনে তাদের সশস্ত্র কর্মীদের সীমাহীন নিপীড়ন সহ্য করতে হয়, অন্যদিকে তাদের চোখের সামনে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে একের পর এক পশুপালনের জন্য প্রয়োজনীয় চারণভূমি বন্ধ হয়ে যায়। বন অধিকার আইনে (FRA) যারা বহুবছর বনে বাস করেন তারা বন থেকে বলপূর্বক উচ্ছেদের হাত থেকে সুরক্ষা পান এবং তাদের বনজমিতে অধিকার ও অন্যান্য প্রথাগত অধিকার(গবাদি পশুচারণের অধিকার ইত্যাদি) স্বীকৃত হয়। তবে এক প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, গুজ্জর ও বাখারওয়ালরা (যাদের বেশিরভাগই মুসলিম) FRA এর আওতায় থাকা সমস্ত অধিকার পেলে তারা ওই অঞ্চলের (মূলত জম্মু, কাটুয়া, সাম্ভা) জনতাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে পারে। এই ধরণের ন্যারেটিভগুলোয় ঘৃতাহুতি দেয় প্রাক্তন বিজেপির মন্ত্রী লাল সিং এর মত লোকেরা যারা আগে এই আইন প্রয়োগের বিরোধিতা করেছিল। এইসবই উপজাতি সম্প্রদায়ের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন অধিকার আইনে (FRA) উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় গ্রামসভার মতো লোকাল বডির সাথে উন্নয়নপ্রকল্প পরিচালনার সিদ্ধান্ত আছে। কিন্তু অন্যান্য জায়গার মত এখানেও আদিবাসীদের বিরুদ্ধে একটা ব্যাপক প্রচার আছে যে তারা বনে অবৈধ প্রবেশকারী ও গবাদিপশু পাচারকারী, যদিও বনজঙ্গলের উপর তাদের নির্ভরশীলতা এবং বন সংরক্ষণে তাদের ভূমিকা নথিভুক্ত আছে।

ছবি: সঞ্চিতা আলী

উপসংহার : প্রাচীন বনজঙ্গল ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এই নীতিগত সিদ্ধান্ত এত দ্রুত গ্রহণ করা হচ্ছে। মূলত সেই সব প্রকল্পগুলোর জন্য এটি আরোই কার্যকরী হবে যেগুলো বাস্তুতন্ত্রের উপর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে ও জলবায়ু পরিবর্তনের হারকে ত্বরান্বিত করতে পারে বলে এতদিন অনুমোদন পায়নি, বিবেচনাধীন ছিল। এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের একেবারে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যখন এইসব পশ্চাদগামী আইনগুলো একে একে কার্যকর হচ্ছে, তখন FRA এর মতো প্রগতিশীল আইন প্রয়োগের কাজও শুরু হয়নি। ওই অঞ্চলে যথাযথ যোগাযোগের ঘাটতি স্বাধীন গবেষণা ও ওখানকার তথ্য জোগাড়ের কাজে এক উদ্বেগের কারণ। কারণ এখনও সামরিকীকরণ ও অন্যান্য প্রকল্পগুলির কারণে ক্রমবর্ধমান দূষণ ও ভূমি বিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত প্রতিযোগিতামূলক ও ধারাবাহিক গবেষণায় বিরাট শূন্যস্থান রয়ে গেছে।

Comments


Subscribe Form

©2020 by People's News Indie. Proudly created with Wix.com

bottom of page